এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান
বলুন তো সার্কাসের ইন্সট্রাক্টর কে? এবং দড়িতে ঝুলে খেলা দেখাতে অযোগ্য সুন্দরী (!) মেয়েটা কে? গাধার পরিচয় তো শেখ হাসিনা দিয়েই দিয়েছেন। আসুন অন্যদের পরিচয় বোঝার চেষ্টা করি।
দিল্লির সার্কাস ইন্সট্রাক্টর বাংলাদেশের এক অযোগ্য সুন্দরীকে (হাসিনা শব্দের অর্থ খুঁজুন) দিয়ে সার্কাস স্টাইলে বাংলাদেশকে চালাতে চেষ্টা করছে, এবং মেয়েটি বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে (দেশ তো এভাবেই চলছে)। ‘দড়িতে ঝুলিয়ে খেলা’টা হচ্ছে- বিনা শুল্কে ট্রানজিট নামের করিডোর, রামপাল, বন্দরের মালিকানা, সাসার্কাস ইন্সট্রাক্টরমরিক চুক্তি, অসম বাণিজ্য চুক্তি, বাংলাদেশের শিক্ষিত যুবকদের বেকার রেখে এইদেশে আট লক্ষ ভারতীয় নাগরিকের কর্মসংস্থান ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়েটা এই খেলা ঠিক মত খেলতে না পারলেই গাধার সাথে তার বিয়ে দেবার হুমকি দিচ্ছে দিল্লির ইন্সট্রাক্টর।
সুন্দরী মেয়ে এবং গাধা দুইটাই ঐ সার্কাসের মালিক মানে দিল্লির সম্পত্তি। ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কখনো রিং এ দেখা যায় ‘সুজাতা’কে, কখনো ‘পিনাক রঞ্জন’কে, আর সর্বশেষ দেখা গেলো ‘প্রনব’বাবু কে।
সার্কাসের মালিকের কিছু ভাড়াটে দর্শকও থাকে। এরা জায়গামত হাততালি দেয়া শুরু করে অন্যান্য দর্শকদের হাততালি দেবার উপলক্ষ তৈরী করে, কখনো কখনো সার্কাসের খারাপ পারফর্রমেন্সে সাধারণ দর্শক ক্ষেপে গেলে এই ভাড়াটে দর্শকরা তাদের সাথে মারামারি করে সার্কাস কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করে।
এবারো ঠিক তেমনি হয়েছিল। প্রনব বাবুর সার্কাস ইন্সট্রাক্টর পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষ তাকে চেয়ারে বসিয়ে রেখে বাংলাদেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ এবং সুশিল ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে ফটোসেসন করার পর সেগুলো তাদের ফেসবুক পেজে আপলোড করেছিল। হয়তো তাদের মনে মনে এইসব ছবির ক্যাপশন ছিল, ‘সার্কাসের ইন্সট্রাক্টরের সাথে গাধা ও ভাড়াটে দর্শকবৃন্দ’। কিন্ত কুটনৈতিক প্রটোকল ভেঙে তাদের এমন সার্কাসিয় আচরণ বাংলাদেশের সাধারণ দর্শক বা ‘উৎসাহী জনতা’ মেনে না নিয়ে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পরে।
সার্কাস মালিকের পক্ষে অবশ্য তাদের ভাড়াটে দর্শক ‘চ্যানেল আই অনলাইন’সহ কিছু সেবাদাস মাঠে নেমে ‘উৎসাহী জনতা’দের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু জনতার গনধোলাইয়ে তাদের হাতে পিস্তল থাকার পরও মার খেয়ে ভুত হতে হয়েছে, ভারতীয় দূতাবাসও সেইসব ছবি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। যদিও ভারতীয় দূতাবাস ছবি সরালেও সার্কাসের ভাড়াটে দর্শক সেবাদাসদের কি-বোর্ড যুদ্ধ অব্যাহত আছে। ছবি ফিরিয়ে আনার দাবীতে তারা সম্ভবত শাহবাগে আরেকটি প্রতিবাদী বিরিয়ানী সমাবেশও করতে চেয়েছিল, কিন্তু দিল্লির কাছে এইসব সেবাদাসের তুলনায় সাধারণ দর্শকের চাহিদা (কারণ টাকাটা আসে এই দর্শকদের পকেট থেকেই) বেশি থাকায় সেই ফান্ড মেলেনি।
যাই হোক, বাচালের মুখ ফসকানো সত্য কথার কারণে আমাদের জন্য বাংলাদেশের সার্কাস সরকার, তার ইন্সট্রাক্টর, সার্কাসের গাধা এবং ‘ইউজ মি’ সাইনবোর্ড লাগানো ভাড়াটে দর্শক ‘সেবাদাস’দের চেনা সহজ হয়ে গেলো।
১/ সংসদে শেখ হাসিনার বক্তব্য: “প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজকে রাস্তার পাশের ডাস্টবিনের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, যেমন আমরা রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে লেখা দেখি ‘ইউজ মি’। তারাও রাজনীতি বা ক্ষমতার ক্ষেত্রে বুকে ওরকম একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েই বসে থাকেন, ‘ইউজ মি’ মানে আমাকে ব্যবহার করুন। তারা সব সময় এরকম একটা আশায় বসে থাকেন। তাদের এই যে না দেখাটাও (উন্নয়ন) কিন্তু ওই ধরনের একটা অসুস্থতা। কারণ তাদের দৃষ্টিটা রয়ে গেছে ওই অবৈধ ক্ষমতার দিকে। এ সময় তিনি স্পিকারের দিকে তাকিয়ে বলেন, আমাকে একটু সময় দিলে একটি গল্প শোনাই। স্পিকার তাঁকে গল্প বলার অনুমতি দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্কাসের একটি সুন্দরী মেয়েকে বারবার দড়িতে ঝুলিয়ে খেলা দেখানোর চেষ্টা করা হলেও সে পারছিলেন না। তাই দেখে তার ইন্সট্রাকটর মেয়েটিকে সার্কাসের একটি গাধাকে দেখিয়ে বলল, এরপর যদি তুমি না পার, তাহলে ওই গাধার সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব। এ কথা শুনে গাধা আশায় আশায় থাকে কখন দড়ি ছিঁড়ে ওই মেয়ে পড়ে যাবে, আর গাধা বিয়ে করবে। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, কিন্তু দড়িও ছিঁড়ে না আর গাধার স্বপ্নও পূরণ হয় না। আমাদের দেশের সুশীল সমাজের অবস্থা এরকম। এ সময় সংসদে হাস্যরোলের সৃষ্টি হয়। সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানান। এরপর শেখ হাসিনা বলেন, তবে আমি তাদের গাধা বলছি না। কারণ তারা সবাই জ্ঞানী গুণী শিক্ষিত, বিদেশি ডিগ্রিধারী। তবে তাদের আচরণগুলো যখন দেখি, আর ওই যে কবে দড়ি ছিঁড়বে, কবে কপাল খুলবে ওই আশায় যারা বসে থাকেন স্বাভাবিকভাবে তখন তো একটু গাধার কথা মনে পড়েই।” (বাংলাদেশ প্রতিদিন)
২/ মূল কৌতুক: এক ধোপার গাধা আর এক সার্কাসের গাধা আলাপ করছে –
ধোপার গাধা: কি হে বন্ধু, কেমন আছ? চেহারা স্বাস্থ্য এত খারাপ হয়েছে কিভাবে?
সার্কাসের গাধা: আর বলিস না দোস্ত,মালিক খুব কঞ্জুস! ঠিক মতো খেতে দেয় না, সুযোগ পেলেই মারে!
ধোপার গাধা:তাহলে আছিস কেন?
সার্কাসের গাধা: আছি কি আর সাধে? সার্কাসের যে মেয়েটি দড়ির উপর খেলা দেখায়, তাকে মালিক বলেছে – যদি পড়ে যাস, গাধার সাথে বিয়ে দেব! আশায় আছি কবে মেয়েটি দড়ি ছিঁড়ে পড়ে যাবে!
ফুটনোট: ফটোসেশনের ঘটনায় ছবিতে থাকা ব্যক্তিদের আমি কোন দোষ দেবো না। কুটনৈতিক প্রটোকল না মেনে ঐভাবে ছবি তোলার দায় সম্পূর্নভাবেই ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষের। তবে ছবিতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে ব্যক্তিত্ববান মনে হয়েছে জুনায়েদ আহমেদ পলককে। অসম্মানজনক প্রটোকলের বিষয়টি বুঝতে পেরেই কিনা জানিনা, তিনি এই ছবির ফ্রেমের বাইরে চলে যাবার জন্য আপ্রান চেষ্টা করেছেন।
লেখকের ফেসবুক থেকে